ঢাকা , শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ , ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরো ৪২৯ কোটি টাকা চায় ইসি বোয়িংয়ের পর এয়ারবাস কেনা নিয়ে কূটনীতিকদের চাপ শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড শ্রীপুরে ছুরিকাঘাতে আহত ৬ শিক্ষার্থী কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ১৫৫৫ মামলা আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে-শাহজাহান চৌধুরী জনগণের সঙ্গে না থাকলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে হারিয়ে যাবে-নজরুল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছে সরকার-প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা টাঙ্গাইল কারাগারে আ’লীগ নেতার মৃত্যু জোটের ভোটে দলীয় প্রতীকের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ আহত ১০ নোয়াখালীতে পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে যুবককে হত্যা কিশোরগঞ্জে ২ পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ৮ দফা দাবিতে বরিশালে নার্সদের বিক্ষোভ সমাবেশ প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু রাজধানীতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট ঝড়-বন্যায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে গাজার গৃহহীন ফিলিস্তিনিরা ইন্দোনেশিয়ায় একদিনে ২ বার ভূমিকম্প হোয়াইট হাউজের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরো ৪২৯ কোটি টাকা চায় ইসি

  • আপলোড সময় : ২৮-১১-২০২৫ ০৩:৩৬:১১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-১১-২০২৫ ০৩:৩৬:১১ অপরাহ্ন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরো ৪২৯ কোটি টাকা চায় ইসি
আগামী বছরের ৫ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ধরেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারিখ স্পষ্ট না করলেও ইসি সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য মিলছে। প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে একই দিনে গণভোট যুক্ত হওয়ায় নতুন রোডম্যাপ করতে হচ্ছে ইসিকে।
গণভোট ও সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা না কাটায় প্রভাব ফেলতে পারে তফসিল ঘোষণায়। তবে ঘোষিত সম্ভাব্য সময়ে নির্বাচন করতে হলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা না হলেও প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ইসিও সেটা চায়।
চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য ২২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নির্বাচনি বছর উপলক্ষে সংশোধিত বাজেটে আরও ৪২৯ কোটি টাকা চেয়েছে ইসি। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দুটি প্রকল্পের আওতায় এই বরাদ্দ চায় তারা।
প্রকল্প দুটির মধ্যে একটি হলো ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত প্রকল্প’। আরেকটি হলো ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন প্রকল্প’। দুটির মধ্যে দ্বিতীয়টি নতুন প্রকল্প। এমন একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে ইসি সচিবালয়। প্রকল্প দুটির মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের ভোট দান সিস্টেম উন্নয়ন এবং নাগরিকদের জন্য পরিচয়পত্র প্রদানে সেবার মান উন্নত করা হবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব এম মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা গত ১৮ নভেম্বর গ্রহণ করেছে।
ইসির তথ্য মতে, চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে সরকার ইসির জন্য দুটি প্রকল্প এবং থোক বরাদ্দ বাবদ মোট ২২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা রেখেছে। এর মধ্যে ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত প্রকল্প’র জন্য। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি একনেক অনুমোদিত। মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বর।
মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশোধিত বাজেটে এই প্রকল্পের ব্যয় ৪০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছর প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২১০ কোটি টাকা। ফলে ৪০০ কোটিসহ প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৬১০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি বাজেটে থাকা আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রেখেছে ৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য থোক বরাদ্দ হিসেবে ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাস পার হলেও দুই প্রকল্প এবং থোক বরাদ্দ থেকে এক পয়সাও খরচ করেনি নির্বাচন কমিশন।
এমতাবস্থায় সংশোধিত বাজেটে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন প্রকল্পের’ জন্য ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। ইসিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন করেছে ৩৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২২৯ কোটি ৫ লাখ টাকার বরাদ্দ থেকে সংশোধিত বাজেটে ৬৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যয় বাড়বে ৪২৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তবে এখান থেকে থোক বরাদ্দের ১০ কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সচিব ড. কাইয়ুম আরা বেগম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসির বাড়তি আবদার প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। নজরেও আসেনি।
আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয়ের খাতের মধ্যে মূল বেতন ধরা হয়েছে। শিক্ষা, বাড়ি ও চিকিৎসা ভাতা, মোবাইল বিল, আবাসিক টেলিফোন নগদায়ন ভাতা, টিফিন ভাতা, পোশাক ভাতা, প্রতিরক্ষা সার্ভিস ভাতা, ব্যাটম্যান ভাতা, ক্ষতিপূরণ ভাতা, উৎসব ভাতা, অধিকাল ভাতা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, সম্মানী, বাংলা নববর্ষ ভাতা, অন্যান্য ভাতা, বিশেষ সুবিধা, আপ্যায়ন ব্যয়, পরিবহন সেবা: যানবাহন ব্যবহার, সেমিনার, বিদ্যুৎ, উপযোগ সেবা চার্জ, ইন্টারনেট, ডাক–কুরিয়ার, টেলিফোন, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, অডিও ভিডিও নির্মাণ, অফিস ভবন ভাড়া, আউটসোর্সিং, নিবন্ধন ফি, পরিবহন ব্যয়, ব্যাংক চার্জ, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, প্রশিক্ষণ, পেট্রোল ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানি, ভ্রমণ ব্যয়, কম্পিউটার সামগ্রী, মুদ্রণ ও বাঁধাই, স্ট্যাম্প ও সিল, অন্যান্য মনোহারি, কনসালটেন্সি, মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, অফিস সরঞ্জামাদি, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা, বৈদ্যুতিক স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণ এবং মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ টাকা ব্যয় হবে।
দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট গ্রহণ সেবা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে পোস্টাল ভোটিং কাজ এবং এআই প্রতিরোধে নানা প্রযুক্তিগত কাজ শুরু করেছে কমিশন। এই জন্যই বাড়তি ব্যয় লাগছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময় শেষে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠাবে ইসি।
এদিকে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক সীমাবদ্ধতা এবং পাঁচ দিনের সময়সীমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এই ঘোষণার ফলে এখন থেকে প্রবাসীরা বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে, যে কোনো সময় নিবন্ধন করতে পারবেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে নিবন্ধন। এ সময়ের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন প্রবাসীরা। গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে টিকটকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তবে পোস্টাল ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রমে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে ভোটারদের পক্ষ থেকে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের সাত দেশে সাময়িকভাবে এ নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশগুলো হচ্ছে- বাহরাইন, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত ৩১ অক্টোবর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে অর্থ সচিবও উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনি বছরে নানা খাতে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে ইসি।
বৈঠকে ইসি জানায়, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হলে ভোটকেন্দ্র এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর পৃথক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজন করলে দুই নির্বাচনের যে ব্যয় সে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ব্যয়ের টাকার সংস্থান করতে হবে, যাতে যথাসময়ে অর্থ ছাড় করা যায়।
বাজেট বরাদ্দ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অর্থ বিভাগের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স